ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
আজকের আর্টিকেলে আমরা ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়, এর কারন, লক্ষন এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। বিভিন্ন কারনে আমাদের গলা ব্যথা হয়ে থাকে। ভাইরাসজনিত কারনে, হঠাত ঠান্ডা লাগলে ইত্যাদি কারনে আমাদের গলা ব্যথা দেখা দেয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয় তা সম্পর্কে।
তাহলে চলুন জেনে নেই ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয় তা সম্পর্কে।
গলা ব্যথা কী এবং কেন হয়?
📌 সাধারণ সংজ্ঞা:
গলা ব্যথা মানে শুধু ব্যথা নয়—এটা অস্বস্তিকর জ্বালা, চুলকানি, এমনকি গলার মধ্যে জ্বলুনি অনুভব হওয়া পর্যন্ত হতে পারে। অনেক সময় গিলতে গেলে, কথা বললে বা শুকনো কাশি দিলে এই ব্যথা আরও বেড়ে যায়।
📌 শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাখ্যা:
আমাদের গলায় আছে ফ্যারিংক্স, ল্যারিংক্স ও টনসিল নামক কিছু সংবেদনশীল অঙ্গ। যখন কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া গলায় সংক্রমণ ঘটায়, তখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্রতিক্রিয়া জানায়, ফলে সেই অঙ্গগুলোতে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন তৈরি হয়। এতে গলা ফুলে যায় এবং ব্যথা করে।
সাধারণত ঠান্ডা লাগা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টনসিলাইটিস, ফ্লু, অথবা পরিবেশ দূষণের কারণে এসব অঙ্গ আক্রান্ত হয়। কিন্তু অনেক সময় এসিড রিফ্লাক্স বা অ্যালার্জিও গলা ব্যথার পেছনে দায়ী হতে পারে।
ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয় – মূল কারণগুলো
📌 ভাইরাল ইনফেকশন:
সর্দি-কাশির মতো সাধারণ ভাইরাসই সবচেয়ে বেশি গলা ব্যথার কারণ। যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, করোনা ভাইরাস, অ্যাডেনোভাইরাস। এগুলো গলায় সংক্রমণ ঘটিয়ে গলা ব্যথা বাড়িয়ে তোলে।
📌 ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ:
বিশেষ করে স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া গলা ব্যথার জন্য বিখ্যাত। একে বলে স্ট্রেপ থ্রোট। এটি সাধারণত জ্বর, সাদা দাগ, ফুলে যাওয়া টনসিলসহ আসে। এই ব্যথা সাধারণ ভাইরাল ব্যথার চেয়ে অনেক বেশি তীব্র হয়।
📌 টনসিলের সমস্যা:
টনসিল হলো গলার পেছনে অবস্থিত দুটি ছোট গ্ল্যান্ড। ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া যখন এগুলোর সংক্রমণ ঘটায়, তখন তাকে বলা হয় টনসিলাইটিস। এতে গলা ফুলে যায়, ঢোক গিলতে কষ্ট হয় এবং মাঝে মাঝে কানে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে।
📌 এলার্জি ও পরিবেশগত কারণ:
ধুলাবালি, ধোঁয়া, ফুলের পরাগ বা পোষা প্রাণীর লোম—এসব অ্যালার্জেন গলায় প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া শুষ্ক বা ঠান্ডা বাতাস, অতিরিক্ত চিৎকার, ধূমপান ইত্যাদিও ঢোক গিলতে গলা ব্যথার অন্যতম কারণ।
গলা ব্যথার লক্ষণ ও পার্থক্য - ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
📌 হালকা বনাম তীব্র ব্যথা:
সাধারণ ঠান্ডা বা ভাইরাল ইনফেকশনে গলা ব্যথা হালকা হয়। এতে সামান্য চুলকানি বা জ্বালা অনুভব হয়। কিন্তু স্ট্রেপ থ্রোট বা টনসিলাইটিসে ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে ঢোক গিলতে গেলে মনে হয় ব্লেড কাটছে!
📌 দীর্ঘস্থায়ী বনাম সাময়িক সমস্যা:
সাময়িক গলা ব্যথা কয়েকদিনের মধ্যে সেরে যায়। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হলে GERD, এলার্জি বা অন্য কোনো আন্ডারলাইন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি গলা ব্যথা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কখন গলা ব্যথা হলে চিন্তার বিষয়? - ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
📌 জরুরি লক্ষণগুলো:
- ঢোক গিলতে একেবারে না পারা
- উচ্চ জ্বর
- কণ্ঠস্বর একদম চলে যাওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- ঘাড়ের গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া
- গলায় সাদা বা হলুদ পুঁজ
📌 ডাক্তার দেখানোর সময়:
উপরের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে আপনি অবহেলা না করে ডাক্তারের কাছে যান। অনেক সময় স্ট্রেপ থ্রোটের মতো সংক্রমণ ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে হার্ট, কিডনি বা জয়েন্টে ক্ষতি করতে পারে। তাই সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গলা ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার - ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
গলা ব্যথা হলে প্রথমেই আমরা ঘরোয়া কিছু প্রতিকার চেষ্টা করি, যা অনেক সময় খুবই কার্যকর হয়। সহজলভ্য উপাদান দিয়ে ঘরে বসেই এই অসুবিধা অনেকটা কমিয়ে ফেলা যায়।
📌 গরম পানি ও লবণ গার্গল:
এটা গলা ব্যথা কমানোর সবচেয়ে পরিচিত ও কার্যকর পদ্ধতি। এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে অন্তত ৩-৪ বার গার্গল করলে গলার ভেতরে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয়, প্রদাহ কমে এবং আরাম পাওয়া যায়। এটি শুধু জীবাণুনাশক নয়, বরং টিস্যুর ফোলাভাবও কমিয়ে দেয়।
📌 ভেষজ চা ও মধু:
তুলসী, আদা, গোলমরিচ, দারুচিনি দিয়ে তৈরি ভেষজ চা গলা ব্যথার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে যা গলার প্রদাহ কমায়। চায়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে তা গলায় আরাম আনে এবং ব্যথা উপশম করে। মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।
📌 বাষ্প গ্রহণ (Steam Therapy):
গরম পানির বাষ্প গলায় জমে থাকা মিউকাস বা শ্লেষ্মা দূর করে। এটা গলা খুলে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ করে তোলে। আপনি চাইলে গরম পানির বাটিতে ইউক্যালিপটাস তেল বা মিন্ট এসেন্স মিশিয়ে মুখে তোয়ালে চাপা দিয়ে বাষ্প নিতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ amodis 400 কিসের ঔষধ
এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলো সব বয়সের মানুষের জন্য নিরাপদ। তবে যদি গলা ব্যথা তিনদিনের মধ্যে না সারে, বা পরিস্থিতি খারাপ হয়, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ওষুধে গলা ব্যথার চিকিৎসা - ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
যখন ঘরোয়া প্রতিকারে আরাম মেলে না, বা গলা ব্যথা খুব বেশি হয়, তখন ওষুধ ছাড়া উপায় থাকে না। তবে ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক কারণ নির্ধারণ করা জরুরি।
📌 সাধারণ ওষুধ ও ব্যবহারের নিয়ম:
- প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন—ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- অ্যান্টি-হিস্টামিন—যদি গলা ব্যথা অ্যালার্জিজনিত হয়, তখন এটি উপকারী।
- থ্রোট স্প্রে বা লোজেঞ্জ—যেমন Orofar, Strepsils, যা সরাসরি গলায় প্রয়োগ করে আরাম পাওয়া যায়।
সবসময় মনে রাখতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজের মতো করে কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
📌 অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সতর্কতা:
অনেকে মনে করেন যে যেকোনো গলা ব্যথায় অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল। অ্যান্টিবায়োটিক কেবল ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্যই কার্যকর। ভাইরাল ইনফেকশনে এটা একেবারেই কাজ করে না। উপরন্তু, অযথা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে শরীরে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তাই গলা ব্যথা যদি স্ট্রেপ থ্রোট বা টনসিলাইটিসের মতো ব্যাকটেরিয়াল হয়, তখন ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করবেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পূর্ণ ডোজ সম্পন্ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
গলা ব্যথা থেকে বাঁচতে যা করবেন - ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
গলা ব্যথা একবার হলে, আবার যাতে না হয় সেটা নিশ্চিত করাও জরুরি। কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস আমাদের এই সমস্যা থেকে অনেকটাই দূরে রাখতে পারে।
📌 প্রতিরোধমূলক অভ্যাস:
- হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন—বিশেষ করে বাইরে থেকে এসে ও খাবার আগে।
- ধুলাবালি ও ধোঁয়ার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- অতিরিক্ত গলা দিয়ে চিৎকার বা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
- হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখুন এবং ব্যবহৃত টিস্যু ফেলে দিন।
📌 খাবারদাবারে সচেতনতা:
- ঠান্ডা পানীয়, বরফমিশ্রিত আইসক্রিম, বা অতিরিক্ত ঝাল খাবার থেকে দূরে থাকুন।
- প্রচুর পানি পান করুন এবং গলা সবসময় আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন।
- ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল (কমলা, আমলকি) বেশি খান, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এই অভ্যাসগুলো দৈনন্দিন জীবনের অংশ বানাতে পারলে গলা ব্যথা থেকে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা যায়।
শিশুদের গলা ব্যথা – আলাদা কী?
শিশুরা অনেক সময় নিজের ব্যথা ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে পারে না। তাই তাদের গলা ব্যথা হলে কিছু ভিন্ন লক্ষণ দেখা যায় এবং সেই অনুযায়ী যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
📌 লক্ষণ ও পরিচর্যা:
শিশুরা যখন গলা ব্যথায় ভোগে, তখন তারা হয়তো খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, কান্নাকাটি করে, বা ঘন ঘন কাশি দেয়। মুখ দিয়ে লালা পড়া, গলা দিয়ে আওয়াজ করে খাওয়ার সময় কষ্ট হওয়া—এসবই গলা ব্যথার ইঙ্গিত হতে পারে।
পরিচর্যার সময় শিশুদের বেশি করে গরম তরল খাবার (যেমন স্যুপ বা গরম দুধ) খাওয়ানো উচিত। ঠান্ডা পরিবেশে কম রাখা এবং হালকা গরম পোশাক পরানোও সহায়ক হতে পারে।
📌 কখন পেডিয়াট্রিক চিকিৎসা দরকার?
যদি শিশু ৩ দিনের বেশি জ্বরসহ গলা ব্যথায় ভোগে, তার গলা ফুলে যায়, বা কিছু খেতে না চায়, তাহলে অবশ্যই শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কখনো কখনো স্ট্রেপ থ্রোট বা টনসিলাইটিস শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা দেয়, যা অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া ঠিক হয় না।
বারবার গলা ব্যথার পেছনে গোপন কারণ - ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
অনেকেই আছেন যাদের বছরজুড়ে একাধিকবার গলা ব্যথা হয়। কখনো তা হালকা আবার কখনো তীব্র। এসব ক্ষেত্রে শুধু ঠান্ডা লাগা বা ইনফেকশন নয়, আরও গভীর কোনো কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে।
📌 এসিড রিফ্লাক্স বা GERD:
গলা ব্যথার সবচেয়ে অবহেলিত কিন্তু সাধারণ কারণগুলোর একটি হলো গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD)। এই অবস্থায় পাকস্থলীর অ্যাসিড গলার দিকে উঠে আসে, ফলে গলার টিস্যুতে জ্বালা এবং প্রদাহ তৈরি হয়। এতে ঢোক গিলতে ব্যথা, খুসখুসে কাশি এবং মাঝে মাঝে কণ্ঠস্বর ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
এই সমস্যা নিরসনে চাই খাবারে নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার, ক্যাফেইন, চকোলেট এবং দেরি করে রাতে খাওয়া এড়িয়ে চলা।
📌 ধূমপান ও ধুলাবালি:
ধূমপান গলার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তামাকের ধোঁয়া গলার টিস্যু শুকিয়ে দেয় এবং প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে ধুলাবালিতে যারা প্রতিনিয়ত কাজ করেন, যেমন নির্মাণশ্রমিক বা রিকশাচালক, তাদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদী গলা ব্যথা দেখা যায়।
এই ধরনের লোকজনের জন্য মাস্ক ব্যবহার এবং প্রতিদিন গলা পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই গোপন কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে গলা ব্যথা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। তাই বারবার গলা ব্যথা হলে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়।
গলা ব্যথা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা
আমরা অনেক সময় শুনে শুনে কিছু ভুল ধারণা মেনে নিই, যা পরে গলা ব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সেগুলো জানা এবং এড়িয়ে চলা খুবই জরুরি।
📌 সব ব্যথাই ঠান্ডাজনিত নয়:
গলা ব্যথা মানেই ঠান্ডা লেগেছে—এ ধারণা পুরোপুরি ভুল। গলা ব্যথার পেছনে ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল, অ্যালার্জিক এমনকি এসিড রিফ্লাক্সও থাকতে পারে। তাই শুধুমাত্র ঠান্ডার ওষুধ বা গরম কাপড় দিয়ে সমাধান না খুঁজে প্রকৃত কারণ বের করা দরকার।
📌 অ্যান্টিবায়োটিক সবসময় নয়:
গলা ব্যথা হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াটা এখন অনেকেরই অভ্যাস হয়ে গেছে। অথচ, ভাইরাল ইনফেকশনে এই ওষুধ একেবারে কাজ করে না। উপরন্তু, অপ্রয়োজনে এসব ওষুধ খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, যা ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি।
সঠিক পরীক্ষা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করে, প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া প্রতিকার ও সাধারণ ওষুধ ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত।
এছাড়া “গলা ব্যথায় বরফ খেলে ভালো হয়”, “মধু সব রোগ সারিয়ে দেয়”—এই রকম অতিরঞ্জিত ধারণাও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। অবশ্যই ভেষজ উপাদান সহায়ক, তবে সব রোগের সমাধান নয়।
জীবনধারায় পরিবর্তন আনলে গলা ব্যথা কমবে কীভাবে?
গলা ব্যথা ঠেকাতে শুধু ওষুধ বা ঘরোয়া প্রতিকার যথেষ্ট নয়। দৈনন্দিন জীবনে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন আনলেই এই সমস্যার হার অনেক কমে আসে।
ঘুম, হাইড্রেশন ও পরিবেশ:
প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পানি পান করলে গলার শ্লেষ্মা তরল থাকে, যা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়ক।
ঘরের পরিবেশে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে অতিরিক্ত সময় থাকলেও গলা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে—এটা এড়ানো দরকার।
📌 মানসিক চাপ ও তার প্রভাব:
বলা হয়, স্ট্রেস ইজ দ্য সাইলেন্ট কিলার। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে দেয়, যার ফলে ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই ধ্যান, যোগব্যায়াম, নিয়মিত হাঁটা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম—এসব অভ্যাস গড়ে তুললে গলা ব্যথা কমে আসতে পারে।
ঘন ঘন গলা ব্যথা হলে পরীক্ষা কী করাতে হয়? - ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
বারবার গলা ব্যথা হলে শুধু প্রতিকার নয়, নির্দিষ্ট পরীক্ষা করানোও জরুরি। এতে মূল কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।
📌 থ্রোট কালচার ও র্যাপিড টেস্ট:
ডাক্তাররা অনেক সময় গলার নমুনা সংগ্রহ করে থ্রোট কালচার বা র্যাপিড স্ট্রেপ টেস্ট করে থাকেন। এতে বোঝা যায় গলা ব্যথার জন্য স্ট্রেপ ব্যাকটেরিয়া দায়ী কিনা। যদি দায়ী হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।
📌 ব্লাড টেস্টের প্রয়োজনীয়তা:
কিছু ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা করে ভাইরাল ইনফেকশন বা অন্য কোনো ইনফ্ল্যামেটরি রেসপন্স ধরা পড়ে। যেমন, CBC (Complete Blood Count) বা ESR পরীক্ষা ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেয়।
এসব পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা নির্ভুল হয় এবং ব্যথা দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরোধ করা যায়।
প্রাকৃতিক প্রতিকার বনাম আধুনিক চিকিৎসা – কোনটা ভাল?
অনেকে ভাবেন ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক প্রতিকারই সবচেয়ে নিরাপদ, আবার কেউ আধুনিক চিকিৎসাকেই বিশ্বাস করেন। বাস্তবে, দুটোরই নির্দিষ্ট সময় ও প্রেক্ষাপট আছে।
📌 তুলনামূলক বিশ্লেষণ:
ঘরোয়া প্রতিকারে যেমন খরচ কম, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম, তেমনি আধুনিক চিকিৎসা দ্রুত উপশম দেয়। তবে সবসময় ঘরোয়া প্রতিকারে নির্ভর করলে জটিল রোগ ধরা পড়তে দেরি হয়।
📌 দুটোর মিশ্র ব্যবহারের সুফল:
সঠিক সময়ে আধুনিক ওষুধের সঙ্গে ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়। যেমন গরম পানির গার্গলের পাশাপাশি ডাক্তার প্রেসক্রাইব করা স্প্রে বা ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
এই ভারসাম্য বজায় রাখলে গলা ব্যথার চিকিৎসা আরও কার্যকর হয়।
উপসংহার: ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়
গলা ব্যথা, বিশেষ করে ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া, একটা অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং জীবনের স্বাভাবিক গতিতে ব্যাঘাত ঘটানো সমস্যা। এটি যেমন হঠাৎ করে শুরু হতে পারে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় পরিণতও হতে পারে যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা দেখলাম—“ঢোক গিলতে গলা ব্যথা কেন হয়”—এই প্রশ্নের নানা দিক। ভাইরাল ইনফেকশন থেকে শুরু করে এসিড রিফ্লাক্স, অ্যালার্জি, এমনকি ধুলাবালিও এর পেছনে কারণ হতে পারে। লক্ষণ বুঝে সময়মতো ঘরোয়া প্রতিকার গ্রহণ, ওষুধ সঠিকভাবে খাওয়া, এবং জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনা—এই সব কিছু মিলিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
সেইসঙ্গে বারবার গলা ব্যথা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটাও অত্যন্ত জরুরি। শুধুমাত্র গরম পানি খেয়ে বসে থাকা বা নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া কোনো সঠিক সমাধান নয়। আমরা যত দ্রুত প্রকৃত কারণ ধরতে পারব, তত দ্রুত আরাম পাওয়া সম্ভব।
আর মনে রাখবেন, গলা শুধু একটা শারীরিক অঙ্গ না—এই গলার মাধ্যমেই আমরা কথা বলি, গান গাই, আবেগ প্রকাশ করি। তাই গলার যত্ন নেওয়াটা মোটেও অবহেলার বিষয় নয়।