পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?

আমাদের আজকের আর্টিকেলের মুল বিষয় হলো পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়? তা সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে আমরা পাস্তুরিত দুধের উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, কাকে বলে এবং কিভাবে এটি প্রস্তুত করা হয় তা সম্পর্কেও জানবো। আশা করি শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন।

পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?

তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেই পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়? সম্পর্কে।

পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?

হ্যাঁ, পাস্তুরিত দুধ সরাসরি খাওয়া যায়। পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুধকে প্রথমে গরম করা হয় এবং পরে ঠান্ডা করা হয়। এর ফলে দুধের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর জীবানু এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। 

এই দুধ আমাদের শরীরের কোনো ধরনের ক্ষতি করে না। যার কারনে পাস্তুরিত দুধ খাওয়া নিরাপদ। তবে পাস্তুরিত করার সময় মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত পরিমানে তাপ যেন না দেয়া হয়। এতে দুধের সব গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়।
 
পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। সব ধরনের পাস্তুরিত দুধ বিশুদ্ধ হয় না। কিছু কিছু পাস্তুরিত দুধের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই প্যাকেটজাত পাস্তুরিত দুধকে আপনি কিনে নিয়ে এসে পুনরায় তাপ দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
 
পাস্তুরিত দুধের প্যাকেজিং সঠিক অবস্থায় আছে কি না তা দেখে কিনুন। কারন অনেক সময় খারাপ প্যাকেজিং এর কারনে দুধ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার পাস্তুরিত দুধকে যদি সঠিকভাবে সংরক্ষন করা না হয়। সেক্ষেত্রে দুধ নষ্ট হয়ে যায়।
 
পাস্তুরিত দুধের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা লক্ষ্য করা যায়। পাস্তুরাইজেশন এর ফলে দুধে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং জীবানু নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে এই দুধ আমাদের শরীরের জন্য নিরাপদ হয়ে থাকে। পাস্তুরিত দুধের মধ্যে পুষ্টি গুনাগুন সঠিক পরিমানে থাকে। এই দুধ খেতে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।

পাস্তুরিত দুধের উপকারিতা

পূর্বে আমরা পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়? সম্পর্কে জেনেছি। যেখানে বলা হয়েছিল, পাস্তুরিত দুধ আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। পাস্তুরিত দুধে কোনো ধরনের জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া থাকে না। যার ফলে আমরা নিশ্চিন্তে পাস্তুরিত দুধ সেবন করতে পারি। নিম্নে পাস্তুরিত দুধের বিভিন্ন উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
 
  • পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমন থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে এই পাস্তুরিত দুধ।
  • আমরা জানি, দুধে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস উপস্থিত থাকে। এই উপাদানগুলো আমাদের হাড় এবং দাত মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • পাস্তুরিত দুধ খেলে আমাদের দাঁতের ক্ষয় রোধ হয়ে থাকে।
  • পাস্তুরিত দুধে অনেক বেশি পরিমানে প্রোটিন থাকে। যা আমাদের দেহের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের পেশির গঠন মজবুত হয়ে থাকে।
  • পাস্তুরিত দুধে অনেক বেশি পরিমানে ভিটামিন বি-১২ থাকে। যা আমাদের মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • আমাদের ত্বক ভালো রাখতে পাস্তুরিত দুধের ভূমিকা অপরিসীম।

পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার নিয়ম

পূর্বে আমরা পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়? এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আমরা যে খাবারই খাই না কেনো তা সঠিক নিয়ম অনুসরন করে খেতে হয়। 

তা না হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেয়। নিম্নে পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।
 
  • পাস্তুরিত দুধ সবসময় শীতল অবস্থায় সংরক্ষন করা উচিত। সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পাস্তুরিত দুধ সংরক্ষন করেন। এইভাবে সংরক্ষন করলে দুধ ভালো থাকে এবং সহজে নষ্ট হয় না।
  • পাস্তুরিত দুধের প্যাকেট খুলে ফেলার ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে খেয়ে নেয়া উচিত। কারন বেশিদিন রাখলে এতে জীবানু এবং ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং দুধ নষ্ট হয়ে যায়।
  • পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে এর প্যাকেট ঝাকিয়ে নেওয়া উচিত। এতে করে দুধে থাকা উপাদান ভালোভাবে মিশ্রিত হতে পারে।
  • পাস্তুরিত দুধের প্যাকেট খোলার পরে গরম করে পান করা উত্তম। এতে করে দুধের মধ্যে থাকা জীবানু দূর হয়ে যায়।
  • পাস্তুরিত দুধের প্যাকেটে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে সময়ের মধ্যে এই দুধ খেয়ে নেওয়া উচিত।

দুধের পাস্তুরাইজেশন কাকে বলে

পূর্বে আমরা পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?, এই দুধের উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো দুধের পাস্তুরাইজেশন কাকে বলে তা সম্পর্কে। 

দুধের পাস্তুরাইজেশন হলো এমন এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে দুধকে প্রথমে গরম করা হয় এবং পরবর্তীতে ঠান্ডা করার মাধ্যমে দুধের মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং জীবানু দূর করা হয়। 

এই দুধ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কারন এতে কোনো ধরনের জীবানু থাকে না পাস্তুরাইজেশন করার ফলে দুধ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়।

পাস্তুরাইজেশন কিভাবে করা হয়

পূর্বে আমরা পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?, এই দুধের উপকারিতা, পাস্তুরিত দুধ খাওয়ার নিয়ম এবং পাস্তুরাইজেশন কাকে বলে তা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো পাস্তুরাইজেশন কোন পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয় তা সম্পর্কে। নিম্নে পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।
 
  • প্রথমে দুধকে ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট বা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ সেকেন্ডের জন্য রেখে দিতে হয়। এতে দুধের মধ্যে থাকা জীবানু এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়।
  • পরে গরম দুধকে ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। যেন কোনো ধরনের জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে না পারে।
উক্তভাবে দুধ পাস্তুরাইজেশন করা হয়।

দুধ পাস্তুরাইজেশন করার পরও কক্ষ তাপমাত্রায় রাখলে নষ্ট হয়ে যায় কেন

পূর্বে আমরা পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?, এটি খাওয়ার নিয়ম, কিভাবে এই দুধ প্রস্তুত করা হয় ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো কক্ষ তাপমাত্রায় রাখার পরেও কিভাবে পাস্তুরিত দুধ নষ্ট হয়ে যায় তা সম্পর্কে। 

আমরা পূর্বে জেনেছি পাস্তুরাইজেশন এর ফলে দুধে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং জীবানু ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু কিছু অনুজীব পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় না। পরবর্তীতে এই অনুজীব নতুন জীবানু এবং ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দিয়ে থাকে। 

দুধে থাকা ল্যাকটোজ ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে দুধ খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই বলা যায় দুধ পাস্তুরাইজেশন করার পরেও কক্ষ তাপমাত্রায় রেখে দিলে দুধ নষ্ট হয়ে যায়।

লেখকের মন্তব্য - পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?

আজকের আর্টিকেলে আমরা পাস্তুরিত দুধ কি সরাসরি খাওয়া যায়?, এই দুধ খাওয়ার নিয়ম, পাস্তুরিত দুধ তৈরি করার নিয়ম ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। 

প্রতিনিয়ত এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইট ফলোও করুন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমুহ বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url