হার্টে রিং পরানোর পর করনীয়

আজকের আর্টিকেলের মুল বিষয় হলো হার্টে রিং পরানোর পর করনীয় সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে আমরা হার্টে রিং পরানোর অসুবিধা, হার্টে রিং পরানোর পর খাবার এবং হার্টের রিং এর মূল্য তালিকা ২০২৪ বিষয় সম্পর্কে জানবো। আশা করি শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন।

হার্টে রিং পরানোর পর করনীয়

তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেই হার্টে রিং পরানোর পর করনীয় কি তা সম্পর্কে।

হার্টে রিং পরানোর পর করনীয়

হার্টে রিং পরানোর পর আমাদের প্রথম করণীয় কাজ হলো দ্রুত সুস্থতার জন্য সঠিক জীবন যাপন অনুসরন করা। নিম্নে হার্টে রিং পরানোর পর আমাদের কি করা উচিত তা সম্পর্কে আরও তথ্য দেওয়া হলো।
 
হার্টে রিং পরানোর আমাদের প্রথম কাজ হলো ওষুধের সঠিক ব্যবহার করা। ডাক্তার যেসকল ওষুধ লিখে দিবেন এবং যখন খেতে বলবে ঠিক সেই নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ওষুধ সেবন করতে হবে। হার্টে রিং পরানোর পর আমাদের রক্ত যেন হার্টে জমা না হয়, সেজন্য আমাদের রক্ত পাতলা করার ওষুধ সেবন করতে হবে।
 
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো প্রকার ভারী ব্যায়াম না করা হয় তা সম্পর্কে। প্রতিদিন নিয়ম মেনে হাটা বা হালকা যোগব্যায়াম শুরু করতে হবে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন- সাইকেল চালানো, হালকা শরীরচর্চা ইত্যাদি ব্যায়াম করা যেতে পারে।
 
হার্টে রিং পরানোর আপনার খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। হৃদরোগের ঝুকি কমাতে আমাদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। শাকসবজি, ফল, শসা এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার এই সময় আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিভিন্ন ধরনের স্যাটুরেটেড খাবার, অতিরিক্ত লবন মিশ্রিত বা অতিরিক্ত চিনি মিশ্রিত খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
 
ধুমপান এবং এলকোহল আমাদের হার্টের জন্য অনেক ক্ষতিকর। যার কারনে হার্টে রিং পরানোর পর এই ধরনের ক্ষতিকর খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
 
মানসিক চাপ কমাতে হবে। কারন হার্টের সমস্যার মুল কারন হলো মানসিক চাপ। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করা দরকার। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং চেক আপ করাতে হবে। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা এই সময়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

হার্টে রিং পরানোর অসুবিধা

পূর্বে আমরা হার্টে রিং পরানোর পর করনীয় বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো হার্টে রিং পরালে কি কি অসুবিধা হতে পারে তা সম্পর্কে।
 
হার্টে রিং বসানোর পর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। অনেকের হার্টে রিং বসানোর পর সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার শিকার হয়ে থাকে। যা পরবর্তীতে আরও ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়। 

নিম্নে হার্টে রিং পরানোর বিভিন্ন অসুবিধা সম্পর্কে তথ্য উল্লেখ করা হলো।
 
  • হার্টে রিং পরানোর পর রেস্টেরনোসিস নামক সমস্যা দেখা দিতে পারে। রেস্টেনোসিস হলো এমন এক ধরনের সমস্যা যেখানে ধমনির দেয়ালে স্টেন্ট বসানোর কিছুদিন পর চর্বি জমে ধমনি সংকুচিত হয়ে যায়। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ওষুধ খেলে তা কিছু সময়ের জন্য সেরে যায়। কিন্তু সম্পূর্ণ সেরে যায় না।
  • হার্টে রিং পরানোর পর আরেকটি সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো রক্ত জমাট বাধে। এক্ষেত্রে হার্টের ধমনির যে অংশে রিং পরানো হয়, ধমনির সেই অংশ সংকুচিত হয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহে বাধা প্রদান করে। এই ক্ষেত্রে রক্ত পাতলা করার ওষুধ খেতে হয়।
  • হার্টে রিং পরানোর পর অনেক সময় রক্তপাতের ঝুকি বেড়ে যায়। ভারী কাজ করলে বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এসময় শরীরের অনেক বেশি বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।
  • হার্টে রিং বসানোর ফলে অনেক সময় রোগীর এলারজির মত সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে ত্বকের বিভিন্ন অংশে চুলকানি, র‍্যাশ এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
  • রিং পরানোর জায়গায় অনেক সময় ইনফেকশনের মত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। রিং পরানো জায়গায় ক্যাথেটার দেওয়ার ফলে সেইখানে ইনফেকশন হয়ে থাকে।
  • অনেক সময় হার্টে রিং বসানোর ফলে ধমনির ফেটে যায় এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এইভাবেও হার্টে ইনফেকশনের মত সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।

হার্টে রিং পরানোর পর খাবার

পূর্বে আমরা হার্টে রিং পরানোর পর করনীয় এবং এর অসুবিধা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো হার্টে রিং বসানোর কি ধরনের খাবার খেতে হয় এবং কোন ধরনের খাবার বাদ দিতে হয় তা সম্পর্কে।
হার্টে রিং বসালে আমাদের খাবারের বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকা উচিত। 

কারন কিছু খাবার আছে যা আমাদের হার্টের জন্য ভালো। আবার কিছু খাবার আছে যা হার্টের ক্ষতি করে থাকে। তাই খাবারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকা উচিত। নিম্নে হার্টে রিং বসানোর পর খাবারের তালিকা সম্পর্কে তথ্য উল্লেখ করা হলো।
 
  • হার্টে রিং বসানোর পর আমাদের ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। কারন তা আমাদের হার্টের অসুখ কমাতে সাহায্য করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি এবং শস্য যেমন- ব্রকলি, পালং শাক, গাজর, বিট, আপেল, কলা, কমলা, ওটস, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত।
  • ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীর এবং হার্টের জন্য অনেক উপকারী। কারন এই ধরনের খাবার আমাদের দেহে থাকা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ যেমন- স্যালমন, ম্যাকারেল, টুনা, আখরোট ইত্যাদি খাবার খেতে হবে।
  • হার্টে রিং বসানোর পর আমাদের লাল মাংসের পরিবর্তে যেসকল প্রোটিনের উৎস আছে সেইসব খাবার খাওয়া উচিত। যেমন- মুরগির মাংস, ডাল, ছোলা, সয়াবিন ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত।
  • অলিভ অয়েল এবং বাদাম জাতীয় খাবার আমাদের শরীর এবং হার্টের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই হার্টে রিং বসানোর অলিভ অয়েল এবং বাদামজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
  • কম ফ্যাটযুক্ত দুধ এবং দুগ্ধজাত বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহন করা উচিত। কারন তা আমাদের হার্টের অসুখ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। হার্টে রিং বসানোর পর আমাদের প্রচুর পরিমানে পানি পান করা উচিত।
এতক্ষন আমরা জানলাম হার্টে রিং বসানোর পর কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত তা সম্পর্কে। এখন চলুন জেনে নেই হার্টে রিং বসানোর পর কোন ধরনের খাবার আমাদের খাওয়া উচিত নয় তা সম্পর্কে।
 
  • অতিরিক্ত পরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার এবং অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • যেসকল খাবারে অতিরিক্ত লবন দেওয়া হয়, সেইসকল খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, সস, প্যাকেটজাত বিভিন্ন খাবার ইত্যাদি খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার আমাদের হার্টের জন্য ক্ষতিকর। তাই অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • লাল মাংসে অনেক বেশি পরিমানে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। যা আমাদের হার্টের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। তাই এই ধরনের লাল মাংস খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
  • এলকোহল এবং সিগারেট এর মত ক্ষতিকর দ্রব্য সেবন থেকে দূরে থাকতে হবে। কারন এতে আমাদের হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত কফি এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।

হার্টের রিং এর মূল্য তালিকা ২০২৪

পূর্বে আমরা হার্টে রিং পরানোর পর করনীয়, এর অসুবিধা এবং রিং বসানোর পর খাবার সম্পর্কে জেনেছি। এখন চলুন জেনে নেই হার্টের রিং এর মুল্য সম্পর্কে।

রিং

দাম

এলেক্স প্লাস (পোল্যান্ড) 

৬০,০০০/=

কোরোফ্লেক্স আইএস এ আর (জার্মানি)

৫৩,০০০/=

অরসিরো (সুইজারল্যান্ড) 

৬৩,০০০/=

মেটাফোর (ইন্ডিয়া) 

৪০,০০০/=

বায়োফ্রিডম (সিংগাপুর)

৬৮,০০০/= 

 

লেখকের মন্তব্য - হার্টে রিং পরানোর পর করনীয়

আজকের আর্টিকেলে আমরা হার্টে রিং পরানোর পর করনীয়, এর অসুবিধা, খাবারের নিয়ম এবং রিং এর দাম সম্পর্কে জেনেছি। আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি আপনার মূল্যবান তথ্য পেয়েছেন। প্রতিনিয়ত এই ধরনের আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইট ফলোও করুন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url